উত্তরবঙ্গের রাজধানী হিসেবে খ্যাত বগুড়া রসনাবিলাসেও অত্যন্ত জনপ্রিয়। বগুড়া নামটি শোনার সাথে যে নামটি মনে আসে তা হল দই। বগুড়ার দই এর খ্যাতি দেশজুড়ে। দূর দূরান্তর থেকে মানুষ এই দইয়ের আকর্ষণে বগুড়া ছুটে আসেন। দই ছাড়াও বগুড়ার উল্লেখযোগ্য খাবার হল ক্ষীর, স্পঞ্জের মিস্টি, মহাস্থানগড়ের চাউলের কটকটি, লাচ্ছা সেমাই, শিক কাবাব, মুরগি ও গরুর চাপ, লাল মরিচ, আঠা আলু, ইত্যাদি।
বগুড়ার দই : বগুড়ার দই এতোটাই সুস্বাদু যে পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বগুড়ায় এসে দইয়ের স্বাদ পেয়ে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠান এই দই। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা কিংবা অঞ্চলে উৎপাদিত হলেও কিছু বিশেষত্বের কারণে ‘বগুড়ার দই’-এর খ্যাতি দেশজুড়ে। উৎপাদন ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে কারিগরদের (উৎপাদক) বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তারা যত্নবান হওয়ায় বগুড়ার দই স্বাদে-গুণে তুলনাহীন। প্রায় দেড়শ’ বছর আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঘোষ পরিবারের হাত ধরে বগুড়ায় দইয়ের উৎপাদন শুরু। পরবর্তী সময়ে বগুড়ার নওয়াব আলতাফ আলী চৌধুরীর (পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর বাবা) পৃষ্ঠপোষকতায় শেরপুরের ঘোষ পরিবারের অন্যতম সদস্য গৌর গোপাল বগুড়া শহরে দই উৎপাদন শুরু করেন।বগুড়ার দই ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়া, রানী এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকে পৌছে যাওয়া বগুড়ার জন্য গর্বের বিষয়।
বগুড়ার ক্ষীর, স্পঞ্জের মিস্টি : দই এর মতো ক্ষীরের জন্যও বগুড়া বিখ্যাত। বগুড়ার সুস্বাদু ক্ষির ও স্পঞ্জের মিস্টি ভীষণ জনপ্রিয়। শহরের সাতমাথা এলাকায় দই এর দোকানগুলোতেই এই ক্ষীর ও স্পঞ্জের মিস্টি পাওয়া যায়।
মহাস্থানগড়ের চাউলের কটকটি : চালের গুড়া, গুড় আর ঘিয়ে তৈরি বগুড়ার সুস্বাদু কটকটি। বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ব্যপক পরিমানে পাওয়া যায় তাই এটি মহাস্থানগড়ের চাউলের কটকটি হিসেবেও পরিচিত। মহাস্থানগড়ের পীর শাহ সুলতানের মাজারের শিরনি বা তবারক হিসেবে প্রচলন হয় কটকটির। বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার শুরু হয় ওরশ; তখন দিনে অন্তত ৫০ লাখ টাকার কটকটি বিক্রি হয়। এখন বিদেশেও যাচ্ছে বগুড়ার এই কটকটি।
বগুড়ার লাচ্ছা সেমাই : বগুড়ার লাচ্ছা সেমাই এতোটাই জনপ্রিয়, দেশের ৮০ শতাংশেরও বেশী চাহিদা মিটিয়ে যায় বিদেশেও। বগুড়ার প্রসিদ্ধ আকবরিয়ার লাচ্ছা ও সাদা চিকন সেমাই স্বাদে অতুলনীয়।
শিক কাবাব : শতাব্দি ধরে বগুড়ার আরেক জনপ্রিয় খাবার শিক কাবাব। প্রস্তুতপ্রণালী এবং প্রস্তুকারকের দক্ষতা বগুড়ার শিক কাবারের স্বাদ অন্যসব জায়গার শিক কাবাব থেকে আলাদা করে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শহরের সাতমাথা এবং কলোনী এলাকায় এই শিক কাবাব ও মসলাদার রুটি পাওয়া যায়।
কলোনির চাপ : বগুড়ার গরুর গোস্তের চাপ ব্যাপক জনপ্রিয়। শহরের কলোনি এলাকায় বেশ কয়েকটা দোকানে সন্ধ্যা থেকে গরুর চাপ, মুরগির ভাজা মাংস, পুরি খেতে প্রতিদিন ভীড় লেগেই থাকে। কলোনিতে যে দোকানগুলো আছে প্রতিটি দোকানে প্রতিদিন এতোটাই ভীড় থাকে যে দোকানের ভেতরে বসে যত মানুষ ভাজা মুরগী, গরুর চাপ, পুরী খান তার চেয়ে বেশী মানুষ দোকানের বাইরে প্লেট হাতে দাড়িয়ে খান।
মরিচ : বগুড়ার লাল মরিচের সুখ্যাতি দেশজুড়ে। এখানে প্রচুর পরিমানে মরিচ উৎপাদন হয়। ধারণা করা হচ্ছে এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন মরিচ (শুকনা আকারে) উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা আছে, এতে কৃষকদের আয় হতে পারে প্রায় তিনশ কোটি টাকা। বগুড়ার মরিচ থেকে জনপ্রিয় ব্যান্ড প্রাণ এর গুঁড়ো মরিচ তৈরি হয়। বগুড়ায় কৃষকের উৎপাদিত মরিচ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যেও রপ্তানি হচ্ছে।
আঠা আলু : বগুড়ার এই আঠা আলু ভর্তার স্বাদ অন্য সব আলুর থেকে আলাদা। বেশ আঠালো এবং অন্যরকম স্বাদের এই আলুভর্তা।