২০১৮ সালের মার্চ মাসের ৩ তারিখে বগুড়ায় জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন মো: আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার)। এক বছর এক মাস পনেরো দিন হল। পুলিশ সুপার হিসেবে বগুড়ায় এসে এই ক’দিনে কী করলেন তিনি? এই কথাটাই ভাবছিলাম। চোর ধরা, ডাকাত ধরা, সন্ত্রাসী ধরা পুলিশের কাজ, পুলিশ তা করবেই। কথা হচ্ছে, এর বাইরে উল্লেখযোগ্য কী করল পুলিশ।
বগুড়ায় যোগদান করেই শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করলেন তিনি। কোন ধরণের ঘুষ ছাড়া দুইশ জনের চাকরি হল। কুলি, শ্রমিক, ভ্যানচালক, ভূমিহীন বর্গাচাষি, দিনমজুর ও ডাব বিক্রেতার সন্তানেরাও চাকরি পেলেন। লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েও সোনার হরিণ নামের যে চাকরির দেখা মেলেনা, ঘুষ ছাড়া এতজনের চাকরি হওয়ায় তা সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং প্রশংসিত হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনলাইন ডিটেকটিভ গ্রুপ গড়ে তুললেন যেখানে সচেতন নাগরিকদের পাশাপশি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের চোখের সামনে ঘটতে থাকা অপরাধের কথা সচিত্র ভাবেও সরাসরি পুলিশ সুপারকে জানাতে থাকে এবং অভিযোগকারীর নাম ঠিকানা গোপন রেখে সে আনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়, অপরাধমূলক কর্মকান্ড লক্ষণীয়ভাবে কমিয়ে আনতে যা যথেষ্ট ভুমিকা রাখে।
বগুড়ায় মাদকের ছোবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষায় তাদের ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী করে তোলার উদ্যোগ নিলেন। বগুড়ার সাতমাথায় ‘ফটো ফিভার, ড্রাগস্ নেভার’ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করলেন। যারা ভালো ছবি তুলেছিল তাদের পুরস্কারও দিলেন।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘নারীর কথা শুনবে বিশ্ব, কমলা রঙ্গের নতুন দৃশ্য’— এই শ্লোগানে তাঁর উদ্যোগে বগুড়ায় ৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচ শতাধিক ছাত্রীদের নিয়ে সাইকেল শোভাযাত্রা হল।
সাইবার অপরাধ দমনে নাগরিকদের সার্বক্ষণিক সেবা দিতে সাইবার পুলিশ বগুড়ার কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যথেষ্ট সক্রিয় থেকে সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধ্যমে জনগণের সাথে পুলিশের একটা সেতুবন্ধনও সৃষ্টি করলেন। সাইবার অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ সহজীকরণ এবং নিরাপদ করে সাইবার অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ করতে সাইবার পুলিশ বগুড়ার অ্যানড্রয়েড এ্যাপ তৈরি করা হল যেখানে অভিযোগদাতার পরিচয় গোপন রেখেও পুলিশকে সাইবার অপরাধের তথ্য জানানো সম্ভব হয়।
‘এসো বই পড়ি, ল্যাপটপ জিতি’ কুইজ প্রতিযোগতার আয়োজন করলেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই পড়ে তা থেকে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পুরো জেলা থেকে এই প্রতিযোগিতায় প্রায় ৫৭৪৮ জন অংশগ্রহণ করে এবং তাদের মধ্যে মোট ১২৪ জন ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯৯ নম্বর পায়। যাদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে প্রথম ৩ জনের হাতে ল্যাপটপ ও পরের ২ জনের হাতে ট্যাব তুলে দেওয়া হয়।
‘যুক্তি মাখা তারুণ্যে, খুঁজি স্বপ্নের ভোর’ স্লোগানে মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আন্ত:কলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন।
২৫ মার্চের কালরাতে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গৌরবজ্জ্বল অবদান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে লাখো শহীদ স্মরণে লাখো প্রদীপ জ্বালো কর্মসূচি গ্রহণ করলেন, বগুড়াবাসীকে সাথে নিয়ে লক্ষাধিক মোমবাতি জ্বালালেন।
তিনি বগুড়ায় আসার পর থেকেই বগুড়া শহরে ছিনতাই কমে গেছে, মাদক লক্ষণীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণে এসছে, অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আগের চেয়ে কমেছে। ভবিষতে বগুড়ার ফুটপাত দখলমুক্ত করা সহ পুলিশের আওতাধীন ক্ষেত্রগুলোতে নিজের সেরাটুকু দিয়ে জনসাধারণের কল্যাণে কাজ করার আশা ব্যাক্ত করেছেন তিনি।
মাত্র কয়েকটা মাসে একটা বছর হয়, এই সামান্য সময়ে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার মো: আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) বগুড়ায় যে কাজগুলো করেছেন তা বগুড়ার ইতিহাসে স্মরণীয় এবং পরবর্তীতে অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।
একজন সুবক্তা, সদাহাস্যোজ্জ্বল, প্রাণখোলা, সৃষ্টিশীল এবং একজন সৎ মানুষ, আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার), অবসরে তিনি বাঁশি বাজাতে ভালোবাসেন, আরো ভালোবাসেন ছবি তুলতে। তাঁর বাঁশির সূর যেমন হৃদয় ছুঁয়ে যায় তাঁর তোলা এক একটা ছবিও যেন কথা বলে। বগুড়ায় এসেই তিনি ব্যাতিক্রমী অথচ সময়পযোগি যে কাজগুলো করেছেন তা বগুড়ার মানুষজন দীর্ঘদিন মনে রাখবে।
দেশের প্রতিটি ধমনীতে জীবাণু, এটা শতভাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা অসম্ভব। বিশ্বের কোনো দেশেই অপরাধ শতভাগ নিয়ন্ত্রিত নয় তবে এর মাত্রাটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব।
মাদক-সন্ত্রাস, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি উন্মুলিত এবং বগুড়া জেলা পুলিশকে পুরোপুরি শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত এবং জনবান্ধব করতে না পারলেও তিনি যে যথেষ্ট চেস্টা করেছেন এবং নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন তা প্রতীয়মান। কারন এদেশে পুলিশের স্বাধীনতা কম, তাঁরা ক্ষমতা পুরোপুরি প্রয়োগ করতে পারেন না। সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থ সংক্রান্ত অনেক কারণ থাকে এর পেছনে।
কিছু বিতর্কিত ঘটনা থাকলেও, বর্তমানে পুলিশ ধীরে ধীরে লক্ষনীয়ভাবে জনবান্ধব হতে চেষ্টা করছেন, ৯৯৯ এর মতো জনবান্ধব সুবিধা নিয়ে এসে তাঁরা জনগণের বীপদে পশে দাঁড়ানোর চেস্টা করছেন এটা ভালো দিক। পুলিশ জনগণের পাশে থাকুক, জনগনও পুলিশের পাশে থাকুক, এই আমাদের প্রত্যাশা। শুভকামনা নিরন্তর।