যোগব্যায়াম : সময়ের স্বাস্থ্য রক্ষার এক অমোঘ দিব্যাস্ত্র

যোগব্যায়াম : সময়ের স্বাস্থ্য রক্ষার এক অমোঘ দিব্যাস্ত্র

বর্তমানে মহাবিশ্বে একটি ঘোর দুর্গতি উপস্থিত হয়েছে । সেটা কারও কাছে অজানা নয়। ভয়ংকর এই মহামারীর থেকে রক্ষা পাওয়া দুরূহ কঠিন ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। কত বিজ্ঞানী, গবেষক, ডাক্তার, রাষ্ট্র নায়ক বা ধর্মগুরু এর সমাধান খোঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছেন অবিরাম। এটা এমন একটি অখণ্ডনীয় ধাঁধাঁ হয়ে দাড়িয়েছে যে কেউ এর উত্তর জানেনা। সবাই নিজস্ব অবস্থান থেকে এর উত্তম সমাধান খোঁজার যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিষেধক উদ্ভাবনের সম্ভাবনা দেখা যায়নি। আবিষ্কার হয়নি কোনো ঔষধ বা পথ্য যা দ্বারা এই মরণঘাতী ছোঁয়াচে করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধ বা প্রতিকার করা যায়। সাধারণ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিধি মানার মাধ্যমে এই রোগের নিরাময়ের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।
 
তবে এটা জানা গেছে যে বড় বড় বিজ্ঞানী, ডাক্তার বা ইয়োগা প্রশিক্ষক গণ বলেছেন যে প্রতিদিন কিছু যোগব্যায়াম করলে শরীরে এক্সট্রা তাপমাত্রা উৎপাদিত হয় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিপ্রাপ্তিতে সাহায্য করে।
 
WHO জানিয়েছে করোনা ভাইরাস ঠান্ডায় বা কম তাপমাত্রায় দ্রুত সংক্রমিত হয়।কিন্তু প্রতিদিন কিছু ইয়োগা বা ব্যায়াম করলে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যা করোনাকে প্রতিহত করতে পারে।
 
যোগাসন বা ইয়োগার আসন গুলো শরীরের বিভিন্ন অংশের stamina বা শক্তি বৃদ্ধি করে। আসন গুলো দেহস্থ স্নায়ু ও পেশিগুলির সচলতা বৃদ্ধি করে রোগমুক্ত ও শক্তিমান করে। মেরুদণ্ড নমনীয় করে যার ফলে শরীরে জরাব্যাধি বাসা বাধতে পারেনা।
ইংরেজিতে একটি উক্তি আছে, ‘Live to be fit and be fit to live’ অর্থাৎ বাঁচতে হলে উপযুক্ত শরীর ও মন নিয়ে বাঁচতে হবে।
চলুন শরীরের জন্য কয়েকটি উপকারী ব্যায়াম বা আসন সম্পর্কে পরিচিত হই।
 
  • শলভাসন :
পদ্ধতি : চিবুক মাটিতে লাগিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। দু’ হাত সোজা করে পেট ও ঊরুর নীচে পাশাপাশি এমন ভাবে রাখুন যেন হাতের তালু দু’টি মাটির ওপর পাতা থাকে। হাতের তালুর ওপর চাপ দিয়ে পা দু’টিকে জোড়া অবস্থায় আস্তে আস্তে সোজা করে ওপরের দিকে যতটা সম্ভব তুলুন। পা দু’টি যেন হাঁটুর কাছে বেঁকে না যায়। দশ থেকে পনেরো সেকেন্ড এই অবস্থায় থেকে উপুড় হয়ে শবাসনে বিশ্রাম নিন। স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসে তিন বার অভ্যাস করুন।
 
উপকারিতা : কোমরের ব্যথা, সায়াটিকা, স্পন্ডিলোসিস, স্নায়বিক দুর্বলতায়,কোষ্ঠবদ্ধতা, ক্ষুধামান্দ্যতে ফলদায়ক। হিব বা নিতম্ব পেশি মজবুত করে ব্যথা সারাতে সাহায্য করে।
 
  • ধনুরাসন:
পদ্ধতি : উপুড় হয়ে শুয়ে পা দু’টি হাঁটুর কাছ থেকে ভাঁজ করে গোড়ালি দু’টি জোড়া ভাবে নিতম্বের কাছে আনুন। এ বার দু’ হাত দিয়ে পায়ের গোছা দু’টো বেশ শক্ত করে ধরে বুক এবং ঊরু মাটি থেকে ওপরের দিকে টেনে তুলুন। তলপেট মাটিতে ঠেকে থাকবে। দৃষ্টি সামনে ও ঘাড় পিছন দিকে হেলে থাকবে। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে মনে মনে দশ থেকে ক্রমশ বাড়িয়ে তিরিশ গুনে তিন বার অভ্যাস করুন। প্রতি বারের পর উপুড় হয়ে শুয়ে শবাসনে বিশ্রাম নিন।
 
উপকারিতা : কোষ্ঠবদ্ধতা, ক্ষুধামান্দ্য, অম্বল, পিঠে ও কোমরে ব্যথা, পেটে বায়ু, কোলাইটিস, হাঁপানি ও পেটে চর্বি কমাতে উপকারী।
 
  • ভূজঙ্গাসন:
ভুজঙ্গ অর্থ সাপ। সাপের ফনার মতো দেখতে লাগে বলে আসনটির নাম ভুজঙ্গাসন। আসনটি নিয়মিত করলে স্পন্ডিলাইটিস, স্লিপ ডিস্ক জাতীয় রোগ হতে পারে না। সব ধরনের স্ত্রীরোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। তাই প্রতিদিন এ আসনটি অভ্যেস করা উচিত।
 
পদ্ধতি:
প্রথমে উপুড় হয়ে দুপা জোড় করে সোজা রেখে মাটিতে শুয়ে পড়ুন। মাথাটা বামে অথবা ডানে – যেদিকে ইচ্ছে কাত করে রাখুন। হাত দুটো শরীরের দুপাশে ও হাতের পাতা মাটিতে লেগে থাকবে। এবার হাত দুটো টেনে নিয়ে এসে দু-বাহু বরাবর উপুড় করে রাখুন। হাতের ওপর ভর করে মাথা ওপরে তুলুন। বুক মাটি থেকে ওপরে উঠবে। কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পা জোড় অবস্থায় সোজা থাকবে। নাভি মেঝেতে লেগে থাকবে। দম থাকবে স্বাভাবিক। এভাবে পূর্ণ ভঙ্গিমায় এসে ১০/১৫ সেকেন্ড অবস্থান করুন। ৩ থেকে ৫ বার করতে পারেন। প্রয়োজনে শবাসনে ১০ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে করতে পারেন। এবার হাতের ওপর ভর করে বুক-পেট- মাথা পেছন দিকে এলিয়ে দিয়ে পা দুটো হাঁটু ভেঙে মাথার তালুর সাথে লাগিয়ে দিন। নাভি ওপরে থাকবে। এ অবস্থানে ১০/১৫ সেকেন্ড থাকতে পারেন। এভাবে ৩ থেকে ৫ বার করতে পারেন।
প্রথম দিকে পা জোড় অবস্থায় আসনটি না করতে পারলে পা দুটো সুবিধা মতো ফাঁক করে অভ্যেস করতে পারেন। ধীরে ধীরে শরীর নমনীয় হলে সঠিক ভঙ্গিমায় আসনটি করতে পারবেন। জোর করে একবারে করতে যাবেন না।
 
উপকারিতা : এ আসনটি নিয়মিত করলে স্পন্ডিলাইটিস, স্লিপ ডিস্ক জাতীয় রোগ হতে পারে না। সব ধরনের স্ত্রীরোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। তাই প্রতিদিন এ আসনটি অভ্যেস করা উচিত। যে সব ছেলে/মেয়ের বয়স অনুযায়ী বুকের গড়ন সরু বা অপরিণত তাদের এ আসনটি করা উচিত। নিয়মিত অভ্যেসে বুক সুগঠিত হয়। আসনটিতে ঘাড় গলা মুখ বুক পিঠ কোমর ও মেরুদন্ডের ওপরে চাপ পড়ায় ঐ অঞ্চলের স্নায়ুতন্ত্রী ও পেশী সতেজ ও সক্রিয় থাকে। পিঠের মাংসপেশীকে মজবুত ও বেশি কর্মক্ষম করে। মেরুদন্ডের হাড় নমনীয় থাকে। টনসিল থেকে মুক্তির জন্যে এবং যারা ঘন ঘন ঠান্ডায় ভোগেন তাদের জন্যে উপকারী।এ আসনটি হাই ব্লাডপ্রেসার রোগীদের জন্যে খুবই উপকারী। মানসিক উদ্বেগ ও উত্তেজনার ফলে আমাদের শরীরের রক্তে এড্রিনালিন বেড়ে গিয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এ আসন নিয়মিত চর্চা এড্রিনাল গ্রন্থিকে ত্রুটিমুক্ত ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। অর্ধ ভুজঙ্গাসনেও পূর্ণ ভুজঙ্গাসনের মতো ফল পাওয়া যায়।নিয়মিত এ আসন করলে হজমশক্তি বাড়ে। যকৃৎ ও প্লীহা সুস্থ থাকে।
 
শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির অন্যতম গতিপথ যোগব্যায়াম। নিয়মিত যোগব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা, মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। পাশাপাশি এটি হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃৎ, কিডনি, পাকস্থলী দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুন্দরভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। যোগব্যায়ামের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি পুরো দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।
 
চিত্তরঞ্জন সরকার

খবরটি শেয়ার করুন...

Comments are closed.




© All rights reserved © 18-2023 boguratribune.com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com