ব্রেইন ভালো হয় কিভাবে? সন্তানদের নিয়ে অনেক মা-বাবাই এই চিন্তা করেন। আড্ডা, পার্টিতে একে অপরের কাছে জানতে চান, ছেলে বা মেয়ের ব্রেইন কেমন? মানুষের ব্রেইন নিয়ে গবেষণা করেন এমন বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, মানুষের ব্রেইনের গঠন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। একদিনে যেমন কারো ব্রেন হঠাৎ করে ধারালো হয়ে যায় না, তেমনি হঠাৎ করে কারো ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দেয় না।
দীর্ঘমেয়াদী এই ব্রেইন গঠনের পেছনে বিজ্ঞানীরা খাবারের প্রভাব খুঁজে পেয়েছেন। কিভাবে, আর কোন ধরণের খাবার মানুষের ব্রেইন গঠনে সহায়তা করে—এবারে তা দেখে নিচ্ছি।
সবুজ সবজি বিশেষ করে মরিচ, বিট পালং এবং বেরি ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমান ক্যারোটিন এবং এন্থোসায়ানিন, এন্টি-অক্সিডেন্ট পিগমেন্ট থাকে যেগুলো স্মৃতিশক্তিকে প্রখর করে। শরীরে বিভিন্ন উপাদান আছে যেগুলো মস্তিস্কের বহি:আবরনের ক্ষতি করে।
আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরডি জ্যানিস জিবরিনের মতে, সবজিতে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিস্ককে এই ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এছাড়া মটরশুটিতে থাকে ফোলিক অ্যাসিড। এটি নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনে সহায়তা করে। যেটা মস্তিস্কে রাসায়নিক সংবাদ বাহক হিসেবে কাজ করে।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড বিশেষ করে ডোকোসাহেক্সানোয়িক এসিড বহন করে। মস্তিস্ক ভালো রাখতে এই উপাদানের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভর্ড টি এইচ চান স্কুল অব পাবলিক হেলথের পুষ্টি বিভাগের গবেষণা সহকারী ভাসান্তি মালিক জানান, মাছে থাকা ফ্যাটি এসিড মস্তিস্ক মেমব্রেনের কোষীয় গঠন এবং ব্রেইন সিগন্যাল উন্নীতকরণ করে।
স্যালমন, স্যারডিনস, ম্যাকরল মাছে প্রচুর ফ্যাট থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফ্যাট মস্তিস্কের স্মৃতিভ্রম দূরীকরনে এবং আলজেইমার’স রোগের ঝুকি হ্রাস করে। প্রতি সপ্তাহে খাদ্যতালিকায় একবার এই মাছগুলো রাখা উচিত। মাছ ছাড়াও বাদাম, শন বীজ এবং শ্বেত বীজের মধ্যেও ওমেগা-৩ ফ্যাট পাওয়া যায়।
চকলেট তৈরির উপাদান কোকোর মধ্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন যৌগ থাকে যেটা এন্টি অক্সিডেন্টের মত কাজ করে এবং মস্তিস্কের স্টিম সেল সংরক্ষণে সহায়তা করে। স্টিম সেল মস্তিস্কের নতুন কোষ উৎপন্ন করে। তবে চকলেট পরিমানমতো খেতে হবে বলে মনে করেন টাফট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড্যানিস স্টেইন্ডলার। তিনি বলেন, করনিক প্রদাহ বা রোগের শুরু এই উৎপাদনশীল কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। তখন চকলেট কোষের স্বাভাবিক চিন্তা এবং স্মৃতিচারণে কাজ করে।
যেসব খাবারে আশ থাকে তা ব্রেইনকে কার্যকরী শক্তি দেয়। মস্তিস্কের জ্বালানি ধরা হয় গ্লুকোজকে যাহা সাধারনত সরাসরি কার্বোহাইড্রেট থেকে আসে। পরিমানমত গ্লুকোজ গ্রহণ না করলে আমরা মস্তিস্কের বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগতে পারি। আমরা ভাত-বা রুটির মাধ্যমে কার্বহাইড্রেট গ্রহণ করি। তবে বেশি আশ পেতে প্রক্রিয়াজাত কার্বহাইড্রেট পরিহার করা উচিত। আশযুক্ত খাবার আমাদের রক্তে চিনির পরিমান কমিয়ে রাখে।
ক্যাফেইন মানুষের বার্ধক্যজনিত স্নায়ুবিক সমস্যা অনেকটা প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০০ মিলিগ্রাম অথবা পাঁচ কাপের সমান কফি গ্রহণ করলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। তবে বিশেষজ্ঞরা ক্যাফেইন গ্রহণে সতর্ক করেছেন কারন এর অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের অনান্য অংশে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে।