কোন পদক্ষেপেই কমছে না দেশের বেকারত্বের হার। বরং বিশ্বব্যাপী বেকারত্ব বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে বলে আশংকা করছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, আইএলও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেকারত্ব কমাতে হলে গুরুত্ব দিতে হবে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে। কর্মমুখী শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধিরও তাগিদ তাদের।
মাজহার ও রাইসুল পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। উচ্চ শিক্ষা শেষ করতে এখনও দুই বছর বাকি থাকলেও কাঙ্ক্ষিত ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের।
এই দুই বন্ধুর মতো কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী। আবার যারা উচ্চ শিক্ষা শেষ করে কাঙ্খিত কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন তারাও ভুগছেন হতাশায়।
দেশে এখন তরুণদের বেকারত্বের হার শতকরা ৪৮ ভাগ। বিআইডিএসের গবেষণা বলছে, মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের মধ্যে পুরোপুরি বেকার, শতকরা ৩৩ শতাংশের বেশি।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, আইএলও’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ৪৭ কোটি মানুষ পূর্ণ কিংবা আংশিক বেকারত্বে ভুগছে। যার ফলে, তারা স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করতে পারছেনা। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা বলে মনে করছেন আইএলওর বাংলাদেশ প্রতিনিধি।
আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পটিআইনেন বলেন, বিশ্বে বেকারত্ব বাড়ছে যার ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশও। এ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি খুবই ভাল। কর্মসংস্থান তৈরিতেও সরকার যথেষ্ট নজর দিচ্ছে। তবে বেকার তরুণ তরুণীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরো কাজ করতে হবে। সেটা করা গেলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে বেকারত্বের হারও কমে আসবে।
কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়া এবং দক্ষতার অভাবই বেকারত্বের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইএলওর হিসাবে ২০১০ সালে বাংলাদেশে ২০ লাখ লোক বেকার ছিল। ২০১২ সালে ছিল ২৪ লাখ। ২০১৬ সালে তা ২৮ লাখে উঠেছে। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ৩০ লাখে ওঠার আশঙ্কা করছে আইএলও।
এদিকে ২০১২ সালের পর থেকে বিশ্বে নাজুক কর্মসংস্থানের হারটি কমে আসছে। তারপরও গত বছর ৪২ শতাংশ বা ১৪০ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান নাজুক ছিল। তবে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে নাজুক কর্মসংস্থানের হার যথাক্রমে ৭৬ ও ৪৬ শতাংশ। আগামী দুই বছরে নাজুক কর্মসংস্থানের পরিমাণ ১ কোটি ৭০ লাখ বাড়বে বলে আইএলওর প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বেকারত্বের হার বেশি হলেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে নাজুক (ভালনারেবল) কর্মসংস্থানের হার কম। আইএলও তথ্যভান্ডার মতে, বর্তমানে বাংলাদেশের কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ২৫ লাখ। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ৫৮ শতাংশ কর্মসংস্থান ছিল নাজুক। ভারতের ক্ষেত্রে হারটি ৭৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ৬০ শতাংশ, নেপালে ৭৯ শতাংশ, ভুটানে ৭১ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৪০ শতাংশ। আনুষ্ঠানিক চুক্তিহীন কাজকে আইএলও নাজুক শ্রেণিতে ফেলে, আর এই শ্রেণিতে পড়ে সাধারণ দিনমজুর, গৃহকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা।
২০১৭ সালে বৈশ্বিক বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়াবে। বিশ্বব্যাপী বেকার মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৯ কোটি ২০ লাখে। চলতি বছর বেকারত্বের হার কমে সাড়ে ৫ শতাংশ হতে পারে। তবে কর্মবাজারে কাজ খুঁজতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়বে। ফলে সংখ্যার দিক দিয়ে বেকারত্বের হার গত বছরের চেয়ে বেশি হবে। ২০১৯ সালেও বেকারত্বের হার কমবে না। বেকার মানুষের সংখ্যা ১৩ লাখ বাড়তে পারে।
আইএলওর প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের দেশগুলো বেশি হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। বৈশ্বিক হারের চেয়ে এ অঞ্চলে বেকারত্বের হারও কম থাকবে। গত বছরও এ অঞ্চলের দেশগুলোতে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ও আগামী বছর বেকারের হার একই থাকবে। তবে ২০১৬ সালে এই অঞ্চলে বেকারত্বের হার আরও কম, অর্থাৎ ২ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল। তখন সংখ্যার দিক দিয়ে বেকার মানুষ ছিল ৯৮ লাখ।
চাহিদা মতো দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বেসরকারি খাতের সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষার পাঠ্যক্রম পরিবর্তন জরুরি বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।